একটা সময় মাঝে মাঝে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করতো। সব কিছু কেমন জানি উদাস
উদাস লাগতো। সেই হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থেকেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। হঠাৎ করে কোথাও
ঘুরতে বের হয়ে যাওয়া। মন ভালো রাখা আর নিজেকে ফিরে পাওয়ার একমাত্র উপায় ঘুরাঘুরি।
প্ল্যান ছাড়াই ইদানিং ঘুরাঘুরি বেশি হয়েছে। এক সময় প্ল্যান ছাড়া কোথাও ঘুরতে যাবো
সেটা চিন্তা করতে পারতাম না। কিন্তু ইদানিং সেটা খুব ভালোভাবেই করছি। ২৬শে মার্চ
গিয়েছিলাম বিরিশিরি, নেত্রকোনায়। আমরা তিনজন। অরণ্য, প্রিন্স এবং আমি। সকালে ঘুম
থেকেই উঠেই আমাদের গন্তব্য মহাখালি বাসস্ট্যান্ড। আমি সবার আগে চলে গেলেও অরণ্য আর
প্রিন্স আসলো মোটামুটি লেট করেই।
কোন বাস বিরিশিরি যায় সেটাও আমাদের জানা ছিলও না। এর আগে আমরা কেউই ময়মনসিংহ রোডে যাইনি। ইন্টারনেটে যা তথ্য পেয়েছিলাম, সেটাই ছিলও আমাদের পুঁজি। তারপর বিরিশিরি’র বাসের টিকেট কেটে বাসে বসলাম। বাসের নাম আল্লাহর রহমত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা রহমত হয়ে থাকেনি। বাসের বেহাল অবস্থা দেখে প্রথমেই মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলও। আমরা তিনজন বাসের বাম পাশে একদম শেষে গিয়ে বসলাম। আস্তে আস্তে বাস পুড়ে গেলে বাস চলা শুরু করল আর সেই সাথে শুরু হল আমাদের ট্যুরও। লক্কর ঝক্কর বাসের পিছনের ভাঙ্গা সিটে বসে আমরা রোলার কোস্টারকে ফিল করেছি। ঝাঁকুনি খেতে খেতে আমার অবস্থা খারাপ হলেও ওরা দু’জন বেশ মজাই করছিলো। ঝাঁকুনি খেলেই আমাদের সিট নড়ে যেতো। কিন্তু এটাই নিয়েই আমরা মজা করতে করতে চলছিলাম। পথে পচা একটা হোটেলে বিরতি দিয়েই আমাদের পথ চলছিল অবিরাম। রাস্তার পাশের দৃশ্য দেখেও আমাদের সময় কাটছিলো। মাঝেমাঝে দুয়েকটা ছবি তোলা। কষ্টের মাঝেও সুখে থাকার আপ্রান চেষ্টা যাকে বলে আরকি!
কোন বাস বিরিশিরি যায় সেটাও আমাদের জানা ছিলও না। এর আগে আমরা কেউই ময়মনসিংহ রোডে যাইনি। ইন্টারনেটে যা তথ্য পেয়েছিলাম, সেটাই ছিলও আমাদের পুঁজি। তারপর বিরিশিরি’র বাসের টিকেট কেটে বাসে বসলাম। বাসের নাম আল্লাহর রহমত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা রহমত হয়ে থাকেনি। বাসের বেহাল অবস্থা দেখে প্রথমেই মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলও। আমরা তিনজন বাসের বাম পাশে একদম শেষে গিয়ে বসলাম। আস্তে আস্তে বাস পুড়ে গেলে বাস চলা শুরু করল আর সেই সাথে শুরু হল আমাদের ট্যুরও। লক্কর ঝক্কর বাসের পিছনের ভাঙ্গা সিটে বসে আমরা রোলার কোস্টারকে ফিল করেছি। ঝাঁকুনি খেতে খেতে আমার অবস্থা খারাপ হলেও ওরা দু’জন বেশ মজাই করছিলো। ঝাঁকুনি খেলেই আমাদের সিট নড়ে যেতো। কিন্তু এটাই নিয়েই আমরা মজা করতে করতে চলছিলাম। পথে পচা একটা হোটেলে বিরতি দিয়েই আমাদের পথ চলছিল অবিরাম। রাস্তার পাশের দৃশ্য দেখেও আমাদের সময় কাটছিলো। মাঝেমাঝে দুয়েকটা ছবি তোলা। কষ্টের মাঝেও সুখে থাকার আপ্রান চেষ্টা যাকে বলে আরকি!
আমাদের টার্গেট ছিলও আমরা সকালে রওনা দিয়ে যাবো, সন্ধ্যায় ফিরে আসবো।
কিন্তু আমাদের যেতেই সারাদিন লেগে গেলো। এমনিই লক্কার ঝক্কর মার্কা বাস তারপর আবার
রাস্তাও খুব ভালো নয়। সেখানেই গিয়েই এক হোটেল থেকে আরেক হোটেল ঘুরাঘুরি করে
ফেললাম। এক জায়গায় রুম না পেয়ে আরেক জায়গায়। আবার রুম পেলেও মন মতো নয়। ‘যিহোবা
শালোম ইভানজেলিক্যাল হলিনেস চার্চ’এর ওখানে রুম বুকিং দিয়ে টুকটাক কাজ শেষ করে
নদীর পাড়ে হাটতে বের হয়েছিলাম। তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে। তারপর রাতের খাওয়া শেষ
করে রুমে এসে বিশ্রাম নিয়ে আবার রাতে বের হলাম আমি আর প্রিন্স। অরণ্য বিরিশিরি’র
ইতিহাস নিয়ে রিপোর্ট লিখছিলও। আর তাতে সাহায্য করেছিলো সেখানকার স্থানীয় এক
মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সেখানে আমাদের ঘুরাঘুরি সহ অনেক কিছুতে সাহায্য করেছিলেন।
আমাদের হোটেলেই তিনি থাকতেন। রুম থেকে বের হয়ে আমরা নদীর পাড়ে গিয়ে বসলাম। নদীটার
নাম সোমেশ্বরী। নদীতে পানি কম থাকায় অনেকটা নিষ্প্রাণ ছিলও। তারপরও প্রচন্ড মন ভালো
করা বাতাস ছিলও তখন। নদীর হিম শীতল বাতাসে ক্লান্ত শরীরে সুখের আবেশ ছুঁয়েছিলো। এরপর
আবার এক পশলা বৃষ্টি এসে আমাদের মন ভিজিয়ে গেলো। তখন মনে হচ্ছিলো না আমরা এতোটা পথ
জার্নি করে এসেছি। এর মাঝে অরণ্য এসে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিলও। এটাই ছিলও আমাদের
প্রথম নদীর পাড়ে রাতে সময় কাটানো। আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো, এক পশলা বৃষ্টি আর সাথে
মন ভালো করা বাতাস। অসম্ভব সুন্দর কিছু সময় কাটালাম। প্রত্যন্ত অঞ্চল বলে সেখানে
প্রায় সন্ধ্যায় সব দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। তাই সন্ধ্যার পরপরই জায়গাটা বেশ নির্জন
হয়ে যায়।
তারপর দিন সকালে ঘুম থেকে জেগেই ফ্রেশ হয়ে ঘুরতে বের হয়ে গেলাম। সেই
মুক্তিযোদ্ধা সহ আমরা চার জন। তাই দুটা রিক্সা ঠিক করলাম। সেখানকার রাস্তা গুলো
বেশ বিপদজনক। নদী থেকে বালি তুলে ট্রাকে বোজাই করে বিভিন্ন জায়গায় বালি সাপ্লাই
দেয়া হয় সেখান থেকে। তাই রাস্তা গুলোর পাশে বেশ বড় বড় ভাঙ্গা। এছাড়া রাস্তা গুলো হল
সরু। তাই একটু বিপদজনক। তারপর কিছুদূর গিয়েই রিক্সা থেকে নেমে গেলাম। নদীতে পানি
ছিলও না তাই বালির উপরেই রিক্সা চলছে আর আমরা পায়ে হেটে। কিছুটা পথ হেটে আবার
নৌকায় রিক্সাসহ আমরা নদী পাড় হলাম। আমাদের গন্তব্য চীনামাটির পাহাড়, রাণীখং,
বিজিবি সীমান্ত ঘাটি ও কুল্লাগড়া মন্দির। সময়ের স্বল্পতার কারণে আমাদের গারো পাহাড়
দেখা হয়নি সেদিন। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না বলে অনেক সময় নষ্ট হয়। তারপরও আমরা
স্বল্প সময়ে খুব ভালো ঘুরেছি। ঘুরাফেরা শেষ করে লাঞ্চ করেই বাসের টিকেট বুক দিয়ে
ফেললাম। সেখানের রাস্তাঘাট ভালো না বলে রাতে কোন বাস নেই সেখান থেকে। শেষ বাস ছাড়ে
বিকেল ৩ টায়। ঠিক তখনই শেষ হয়ে গেলো আমাদের বিরিশিরি ট্যুর। টুকটাক বিপদ ছাড়া
আমাদের ট্যুরটা অনেক চমৎকার হয়েছে। যায়। প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও জায়গাটা বেশ সুন্দর।
নদী, চীনা মাটির পাহাড়, আধিবাসীদের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। ঘুরাঘুরির ব্যাপারে আমাদের সর্বাত্মক সাহায্য করেছেন একজন স্থানীয়
মুক্তিযোদ্ধা, নিরঞ্জন অধিকারী। তিনি একজন আধীবাসি। চমৎকার মনের বিস্বস্ত একজন মানুষ।
কাহিনী সংক্ষিপ্তাকারে।
বিস্তারিত তথ্যঃ bn.wikipedia.org/wiki/বিরিশিরি
বিরিশিরি, সুসং
দুর্গানগর, বিজয়পুর, নেত্রকোনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন