অনেকদিন পর
আজ আঝোরে কেঁদেছি। ভুলে গেছি কবে শেষ এভাবে ফুফিয়ে কেঁদেছিলাম। আমি মোটেও কাঁদতে
চাইনি এভাবে। কিন্তু আমার আর সইছিলো না। আমি সাধারণ ভাবেই নরম প্রকৃতির মানুষ। তাই
অল্পতেই মন খারাপ হয় অনেক।
গতকাল থেকেই
ঝামেলা গুলো পিছু ছাড়ছে না। এমনি সেমিস্টার ফাইনাল চলছে। কুইজ, এসাইনমেন্ট,
প্রজেক্ট, প্রেজেন্টেশানের ভীড়ে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছি। গতকাল ছিলও একটা
প্রেজেন্টেশান এবং একটা ফাইনাল। ফাইনাল নিয়ে যত বেশী টেনশন ছিলও না, তার চেয়ে বেশী
টেনশন ছিলও প্রজেক্ট, প্রেজেন্টেশান নিয়ে।
গ্রুপের একজনের দায়িত্বে ছিলও রিপোর্ট আউটপুট এবং স্লাইড বানানো। আমার পক্ষ
থেকে যা করার আমি সব তাকে দিয়েছি। সে সব রেডি করছে। মাঝে মাঝে ফোনে খোঁজ নিচ্ছি।
সে কাজ করছে। সব ঠিকঠাক মত হয়ে যাবে।
কিন্তু প্রেজেন্টেশানের আধাঘন্টা আগে সে
জানালো যে সে প্রেজেন্টেশান দিবে না। রিপোর্টটা সে কোন রকমে করে পাঠিয়েছে। পরে
দেখলাম সেটাও পুরোপুরি কমপ্লিট হয়নি। এই খবর শুনে রীতিমত মাথায় বাজ পড়ল। এদিক ওদিক
ফোন দিয়ে একটা ল্যাপটপ ম্যানেজ করতে হল। এরপর আবার রিপোর্ট প্রিন্ট, স্পাইরালের
ঝামেলা রয়েছে। ফটোকপি সেন্টারে ভীড়। শুক্রবার থাকায় বাইরের সব দোকান বন্ধ ছিলও।
ঝামেলার পর ঝামেলা। তারপর ম্যানেজ করা ল্যাপটপ দিয়ে কোন রকমে কাজ শুরু করেছি।
ক্লাসে বসে বসে কোন রকমে স্লাইড বানিয়েছি। যাতে কোন রকম হলেও প্রেজেন্ট করতে পারি।
সবার প্রেজেন্টেশান প্রায় শেষ আর বাকি ছিলও তিনটা গ্রুপ। আমাকে স্যার ডেকে বললেন,
তোমাদের প্রেজেন্টেশান কাল হবে, ফাইনালের পরে। আমি আর কিছু না বলে ক্লাস থেকে বের
হয়ে গেলাম সেদিনের ফাইনাল দেয়ার জন্য। ফাইনাল দিয়ে বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীর আর
পারছিলো না। ঘুমিয়ে গেলাম সেদিনের মত।
পরদিন সকালে
উঠে আবার ফাইনালের জন্য টুকটাক প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম আর প্রজেক্টের কাজের ভুল
ত্রুটি গুলো বের করে সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। দুপুর সাড়ে বারোটায় এক বন্ধু ফোন
দিয়ে জানালো এগারোটায় শুরু হয়ে পরীক্ষা হয়ে গেছে! আমি জানতাম পরীক্ষা দুপুর দুই’টায়।
খবরটা শুনে মনে হল মাথায় বাজ পড়ল। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হবো এর মাঝে দেখি বাইরে
অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। ছাতা নিয়েই বের হলাম। আমি সাধারণত বৃষ্টিতেও ছাতা ব্যবহার
করিনা। এমনি এমনি কেটে গেছে। তারপরে ভার্সিটি পৌঁছে স্যারের রুমে গিয়ে কথা বললাম
অপ্রস্তুত ভাবে। স্যার শুনেই ঝাড়তে শুরু করলেন। লেইম এক্সকিউজ... হাবিজাবি আরও
অনেক কথা বললাম। অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেও বুঝাতে এবং বিশ্বাস করাতে পারিনি বিষয়টা
স্যারকে। স্যার আমাকে বকছিলেন আর আমি কাঁদছিলাম। স্যার আমাকে বলল, আমাদের
(স্যারের) মন অনেক শক্ত হয়ে গেছে এক্সকিউজ শুনতে শুনতে । তারপরে স্যার পরে পরীক্ষা
নিবে জানিয়ে আমাকে বিদায় জানালো। তারপরেও
আমার কান্না কিছুতেই থামছিলো না। নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু স্যারের
কথা আর ব্যাপারটা মনে হলেই চোখে পানি চলে আসে।
আমার
ভার্সিটি লাইফে আজ বাদ দিয়ে কখনো কোন ফাইনাল, মিডটার্ম, এসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট,
প্রজেক্ট, প্রেজেন্টেশান ইভেন একটা সিঙ্গেল কুইজ পর্যন্ত মিস করিনি! কিন্তু সেটা
আজ হল। শেষ পর্যন্ত স্যার যদি দয়া করে পরীক্ষা নেয় তাহলে হয়ত দুঃখটা কিছুটা হলেও
লাঘব হবে।
সেই পরীক্ষা কি স্যার নিয়েছিলেন? আমি শিক্ষকের দিকটাও বুঝতে পারি, কারণ অনেক এক্সকিউজ আমাদের শুনতে হয়। কিন্তু ঝারি দেওয়ার কালচারটা আমাদের এখানে নেই। নিয়ম মাফিক সব করতে হয় যাতে কারো প্রতি অন্যায় না করা হয় এই জন্য। তবে পরীক্ষা, কুইজ, প্রেসেন্টেশন ইত্যাদি ঠিক কখন হবে এইসব অবশ্য আমাদের এখানে সেমিস্টারের প্রথম দিনই সবাই জানে। এইসব যখন তখন ঘোষনা দিয়ে করা এক্কেবারেই ঠিক না।
উত্তরমুছুনপরীক্ষা নিয়েছিলেন তবে প্রেজেন্টেশান নেননি। আবার প্রজেক্ট জমা নিয়েছেন।
উত্তরমুছুনআমাদেরকেও আগে বলে দেয়া হয়। কিন্তু ঐ স্যার তিনবার পরীক্ষা এবং প্রেজেন্টেশনের ডেট চেঞ্জ করেছিলেন। লাস্ট এনাউঞ্চটা ক্লাসে করেছেন কিন্তু ইমেল করে জানাননি। তাই আমার মিস্টেক হয়েছে। আর সেমিস্টারের শেষ দিকে এসে মাথা ঠিক থাকেনা। তাড়াহুড়ো সব কিছুতে।