শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬

উজানে বাঁধ ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ


বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। নদী আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে; অথবা বলা যায় আমরা নদীর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি। এই নদী আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের জীবন। এই নদী আমাদের ভালো লাগার, সুখের কারণ। আবার এই নদী আমাদের কষ্টের কারণ। এই নদীকে ঘিরেই আমাদের জীবন। আমরা অনেকেই এইদেশের  অনেক নদীর নাম জানিনা। যেটা আমাদের সবার জানা উচিত কারণ এটা আমাদের সংস্কৃতির বিরাট একটা অংশ।


“উজানে বাঁধ ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বইটির লেখক প্রফেসর ড. খালেকুজ্জামান (মতিন)একজন পরিবেশ বিশারদ। বর্তমানে তিনি আমেরিকায় লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুতত্ব বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। বাংলাদেশের পানি সম্পদ, পরিবেশ নিয়ে তাঁর শতাধিক প্রবন্ধ দেশে বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সহযোগিতার রূপরেখা বিষয়ে ইতোমধ্যে একজন খ্যাতিমান বিজ্ঞানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশের পানি সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের বিদ্যমান বৈরিতাকে সহযোগিতায় রূপান্তর করার জন্য নিরান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গত দুই দশক ধরে

বইটিতে তিনি বাংলাদেশের নদী ও পানিসম্পদ বিষয়ে অনেক গুরুত্বপুর্ন বিশ্লেষন যে বিষয় গুলো আমরা হয়ত এখনো বুঝতে পারছিনা। কিন্তু এটা ভবিষ্যতে আমাদের দেশের জন্য মূল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যেটা বর্তমানে নদী-পাড়ের মানুষেরা হয়ত বাস্তবতার নিরিখেই উপলদ্ধি করছেন, কিন্তু বুঝতে পারছেন না বন্যা, খরা এবং বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়াপ্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকৃত কারণ গুলোযেটা লেখক বইটিতে খুব সুন্দর, সুক্ষভাবে কারণ, সমস্যা এবং তাঁর সমাধান সহ লিখেছেন। ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে আছে বিশদ আলোচনা। আমরা ছোটবেলায় সামাজিক বিজ্ঞান এবং পরিবেশ পরিচিতি বইয়ে ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে পড়েছিলাম। যার সমাধান আজও হয়নি। টিপাইমুখ বাঁধ, গঙ্গা,তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি হয়ে, হয়েছে, হচ্ছে করেও ঠিকমত হয়ে উঠেনি, যার কুফল আমরা ভোগ করছি বর্ষাকালে এবং গ্রীষ্মকালে। বর্ষাকালে কেনও হঠাত আমাদের নদীর পানি বেড়ে আশেপাশে প্লাবিত হয়! ক্ষতিগ্রস্থ হয় লাখ লাখ মানুষ। আবার কেনো গ্রীষ্মে আমাদের খরায় ভুগতে হয়! কারণ ফারাক্কা, তিস্তা, গঙ্গা কোন নদীর পানির সুষম বন্টন নেই। টুকটাক চুক্তি থাকলেও ভারত সেটা নিজের মত করে ব্যবহার করছে। যেটা নিয়ে আমাদের পুর্বের সরকার এবং বর্তমান সরকার কারো কোন মাথা ব্যথা ছিলো না, এখনো নেই। যখন সমস্যা শুরু হয় তখন মিডিয়ায় কিছুদিন শোনা গেলেও, কিছুটা সময় পরে সেটা নিভৃতে চাপা পড়ে যায়। কেউ বন্ধুত্বের কথা বলে সব বিলিয়ে দিলেও নিজের পাওনাটা কিন্তু আদায় করে নিতে পারছেনা। অন্যরা  কিন্তু ঠিকই নিজেরটা আদায় করে নিচ্ছে। পানিসম্পদ বিষয়ে ভারত সরকারের অসংগত নীতিমালা গুলোর বিশদ ব্যাখা এই বইটিতে রয়েছে।

উপরুন্ত, ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের করনীয় কি হবে সেটা নিয়ে লেখক বিশদ আলোচনা করেছেন। মোটকথা বইটি বাংলাদেশের পানি সম্পদ, জলবায়ু, পরিবেশ পরিস্থিতির বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে পুরোপুরি তথ্য ভান্ডারের একটি মুল্যবান দলিলযারা পরিবেশ বিষয়ে পড়াশুনা করছেন বা যাদের পরিবেশ নিয়ে জানার আগ্রহ আছে তাদের জন্য বইটি খুব উপকারী হবে বলে আমি মনে করি। যদিও পরিবেশ বিষয়ে আমাদের সবার জানা উচিত। কারণ পরিবেশ যদি ঠিক না থাকে, আমাদের জীবন যাপন ব্যহত হবে প্রাকৃতিক ভাবে। প্রকৃতি ভালো না রাখলে আমরাও ভালো থাকতে পারব না। তাই সবাইকে এসব বিষয় জেনে সচেতন হতে হবে, তবেই আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে সুখী, সুন্দর, পরিপাটি দেখতে পাবো।

বইটি দিব্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত। যার মুল্য মাত্র ২৫০ টাকা। এটি লেখকের বাংলায় প্রকাশিত প্রথম বই। আশা করছি তিনি বাংলায় আরো লিখবেন আমাদের জন্য। যা আমাদের ভবিষ্যৎ কারনীয় হিসেবে কাজে লাগবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন