বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

ইনসমনিয়া

ইনসমনিয়া কি?
খুব সোজা কথায় ইনসমনিয়া হচ্ছে আপনার ঘুমের সমস্যা যা আপনার স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করবে। যাদের ইনসমনিয়া আছে তারা ঘুম নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়েন। অনেকে দিনে ঘুমিয়ে পড়েন, দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে, অফিসে, ক্লাসে, বাসে, গাড়িতে। এভাবে ঘুমের অভাবটা পূরণ করে নেন। তারা সারারাত জেগে থাকেন। কিংবা একটু ঘুমিয়ে হঠাৎ তাদের ঘুম ভেঙে যায় এরপর সারা রাত জেগে থাকেন, আর ঘুম আসেনা কোনোভাবেই। অনেকে ভোরের দিকে অল্প একটু ঘুমিয়ে পড়ে আবার উঠে পড়েন।  এই সমস্যা একটানা হতে পারে। আবার একটা সময় গ্যাপ রেখে আবার শুরু হতে পারে। কিন্তু চক্রাকারে হতে থাকে।
ইনসমনিয়া দুভাবে হতেপারে –
- অল্প সময়ের জন্যে। এই ইনসমনিয়া হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে প্রাত্যহিক জীবনের ছোটখাটো  ধকল কিংবা “stress”। আমরা এগুলোকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। এইধরণের ইনসমনিয়া অল্প দিন থাকে। মাঝে মাঝে মাস। মাঝে মাঝে সপ্তাহ। আবার নিজে নিজে ঠিক হয়ে যায় স্ট্রেস কমে গেলে।

- ক্রনিক ইনসমনিয়া হচ্ছে যেটা আপনার সব সময় থাকবে। বছরের পর বছর ধরে আপনার ঘুম হবে না। এটা হয় হতাশা কিংবা শারীরিক কোনো সমস্যা থেকে অনেক সময়।
ইনসমনিয়ার কারণঃ
দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছুই আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে ইনসমনিয়া তৈরি করে। নিচে কিছু কারণ দেয়া হলঃ
ধকল: 
পরের দিন আপনার একটা জরুরী কাজ আছে। সেটা ঠিক মতকরতে পারবেন কিনা। ক্লাসে একটা পরীক্ষা আছে। কিংবা অফিসে একটা প্রেজেন্টেশান আছে। কোথাওস্পিচ দিতে হবে আপানাকে। ঠিক মত দিতে পারবেন কিনা। মিটিং আছে একটা। সেখানে অনেকসিদ্ধান্ত হবে। কি হতে পারে সেখানে। এমন অনেক কিছু আমাদের মস্তিস্ককে চাপ দেয়।আমরা চিন্তা করি। মাঝে মাঝে অনেকে এগুলো নিতে পারেন না। অতিরিক্ত চিন্তা শুরু করেদেন। চাপ এসে পড়ে ঘুমে।
হতাশা -দুশ্চিন্তাঃ 
এগুলো ইনসমনিয়ার অন্যতমপ্ রধান কারণ।
অনিয়মিতঘুমের সময়ঃ
খেয়াল করবেন এটা খুব ভাল করে। আমরা এক সময় আমাদের অবসর সময়ের কাজগুলো অবসর সময়েই করতাম। কিন্তু এখন? সেগুলো করি রাত ১২টার পর। অনেকে মুভি দেখেন। তাদের কাছে আদর্শ সময় মুভি দেখার রাত ১২ টার পর।লেখালেখি করেন অনেকে। অনেকেরই একটা নির্দিষ্ট সময় লেখার মুড আসে। সেটা রাত ১২ টার পর। কিংবা মধ্যরাতে। দেখা যাবে লিখতে লিখতেই কিংবা মুভি দেখতে দেখতেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর এই ঘুম ভেঙেও যায় তাড়াতাড়ি। অনেক ক্ষেত্রে ভাঙে না। কিন্তু সেটা স্বাস্থ্যকর কিছু না।
পরিবেশঃ
অনেকে এটা স্বীকার করবেন না। কিন্তু উড়িয়ে দিবেন। কিন্তু এটাই সত্যি। ঘুমের জন্যে পরিবেশ দরকার। যদি আপনার ঘুমের সমস্যা হতেই থাকে দিনের পর দিন সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ঘুমের জন্যে একটা শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। অনেকে নিজের বিছানা ছাড়া ঘুমাতে পারেন না। অনেকে অন্য জায়গায় ঘুমাতে পারেন না। ঘুমের জায়গা বদলে গেলেই তাদের এক ফোঁটা ঘুম হয়না। খেয়াল করে দেখবেন যারা বিমানে ঘন ঘন ভ্রমণ করেন তাদের ঘুমের সমস্যা আছে। একটা ক্ষীণ শারীরিক অবসাদ তাদের ভেতরে দেখা দেয় ভ্রমণের পর কিছুদিন। যেটাকে আমরা জেট ল্যাগ বলি।
অন্যান্য শারীরিক সমস্যাঃ
অনেকের অনেক ধরণের শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। যেমন তীব্র ব্যথা।নিঃশ্বাসে সমস্যা। এগুলো অনেক সময় ঘুমের ব্যঘাত ঘটায়।
উদ্দীপকঃ
তামাক – ক্যাফেইন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যালকোহল আর নির্দিষ্ট কিছু ড্রাগ যা আপনার ঘুমের ব্যঘাত তৈরি করে। যারা ঘন ঘন চা সিগারেট কফি ছাড়া থাকতে পারেন না। একটু খেয়াল করে দেখবেন তাদের ৮০% ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন।
ইনসমনিয়ার লক্ষণঃ
একেকজনের ক্ষেত্রে এগুলো একেক রকম হতে পারে। সবার ক্ষেত্রে এক হবে এমন কোনো কথা নেই। নিচে কিছু  প্রধাণ লক্ষণ দেয়া হলঃ
> ঘন ঘন ঘুমিয়ে পড়লে। কাজ করতে করতে, ক্লাসে, অফিসের ফাঁকে, পথে ঘাটে, গাড়িতে, দিনে দূরে কোথাও ট্র্যাভেল করার সময়। কিংবা বিছানায় এপাশ ওপাশ করা ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুমের অপেক্ষায়।
> মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে। এরপর আর ঘুম না আসা।
> রাতে দেরী করে ঘুমানোর পর প্রতি ভোরে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া।
> ঘুম ভাঙার পর ক্লান্তি বোধ করা। মনে করা আরও কিছুক্ষণ ঘুমানো দরকার।
> সারাদিন কাজের ফাঁকে ঘুম আসছে আসছে মনে হওয়া। একটু ঘুমালে ভাল লাগত এমন মনে হওয়া।
 ইনসমনিয়ার চিকিৎসাঃ
ইনসমনিয়া কোনো রোগ না। স্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট কোনো টেস্ট নেই এটিকে ধরার। স্বাভাবিক জীবনের অনেক ছোটখাটো সমস্যা যা ওপরে লিখলাম সেগুলো থেকে ঘুমের সমস্যা নিয়মিত যদি হতেথাকে,তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে আপনি ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত।আপনি ডাক্তারের কাছে এই সমস্যা নিয়ে যেতে পারেন। আপনাকে কিছু ঘুমের ওষুধ দেয়া হবে। সাময়িক ঘুম হবে।ক্রনিক হয়ে গেলে ইনসমনিয়া সেই ওষুধে কাজ হবে না।আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ওষুধ নেয়া সমর্থন করিনা। নিজে নিজে আপনি এটিকে সারিয়ে যদি তুলতে পারেন। তাহলে কি দরকার ওষুধের?
প্রথমেই আপনার নিজেকে জানতে হবে কেন আপনার ঘুম হচ্ছে না। আপনার যদি কোনো মেডিকাল প্রবলেম থাকে- (শারীরিক তীব্র ব্যথা, স্বাভাবিকভাবে ধকল সহ্য না করতে পারা) – এগুলোকে একটু নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে কিছু পরিবর্তন আনলেই কিন্তু আপনি আপনার ইনসমনিয়াকেও জয় করতে পারবেন।
আজকে থেকেই শুরু করে দিন। এভাবে –
 > একটা নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যান। আপনার সুবিধা মত। ধরে নিন রাত ১২ টা। গল্পের বই।মুভু। টিভি। ফেসবুক। মোবাইল সব বন্ধ করে দিন। ঘুম আসবে না। চোখ বন্ধ করে রাখুন জোর করে। সব চিন্তা মাথা থেকে দূরে রাখুন ঐ সময়ে। সব চিন্তা। সব দুশ্চিন্তা। ভাল কিছু চিন্তা করতে করতে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
> অ্যালার্ম দিন ঘড়িতে। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। হতে পারে সকাল ৮ টা। আপনার সুবিধামত।
> সন্ধ্যার পর চা/কফি খাওয়া বন্ধ করুন। যারা অ্যালকোহল নেন, বন্ধ করুন। বলতে পারেন চা ছাড়া বাঁচবো কিভাবে? আমার প্রশ্ন – ঘুম না হলে সুস্থভাবে বাঁচবেন কিভাবে?কোনটা জরুরী?আপনার ঘুম নাকি আপনার চা খাওয়া সন্ধ্যা?”
> যদি সম্ভব হয় ছোটখাটো শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন। কিন্তু সেটা অবশ্যই সেটা বিছানায় যাওয়ার ৪/৫ ঘন্টা আগে।
> দিনের বেলা ঘুম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
কারও কারও ওষুধের দরকার হয় কিছু সময়ের জন্যে। ডাক্তাররা তখন প্রেসক্রাইব করেন অল্প সময়ের জন্যে ঘুমের ওষুধ যদি অন্য চিকিৎসা কাজ না করে। কিন্তু একটা সময় ওষুধ কাজ করেনা। কারণ আপনার স্বাভাবিক জীবনের নিয়মগুলো কিন্তু কোনো ওষুধ পাল্টে দিতে পারবে না। এটা আপনার নিজেকেই পাল্টাতে হবে। মাঝে মাঝে ঘুমের ওষুধ নেয়া অনেকের অভ্যাস হয়ে পড়ে। যেমন ঘুমাতে যাচ্ছে। একটা ওষুধ খেতেই হবে। না খেলে ঘুম আসবেই না। এটা খুবই খারাপ। মনে রাখবেন – মানসিক সমস্যার জন্যে ওষুধ সব সময় স্বল্প সময় কিংবা একটা নির্দিষ্টই সময়ের জন্যে দেয়া হয়। সেটা যদি আপনি দীর্ঘ দিন নিতে থাকেন- তাহলে সেটি কখনই কাজে দিবেনা। বরং উল্টো আপনার নানাবিধ শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে।
আমি এক সময় প্রচুর চা – কফি খেতাম। এখন খাই না। দিনে ১ কাপ চা খাই সকালে। যারা আমাকে একটু হলেও চেনেন, জানেন আমার ঘন ঘন গুড়ের চা খাওয়ার অভ্যাস আছে। সাথে কড়া কফিও। কফি না হলে আমি স্বাভাবিকভাবে কাউন্সেলিং শুরু করতে পারতাম না। লেখালেখি এগোতে পারতাম না। এখন পারছি কিভাবে?
আগে সারা রাত জেগে থাকতাম। মুভি দেখতাম। এখন দেখি সময় করে। কিন্তু রাতে না। কাজগুলো বেশীর ভাগ দিনে শিফট করে ফেলেছি। রাতে গান শুনি। শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাই। গল্পের বই ইচ্ছা করলে পড়ি। অভ্যাসটা এমনভাবে করে ফেলেছি এখন বিছানায় একটু গড়াগড়ি দিলেই চোখ বন্ধ হয়ে আসে।আগে জাগতাম ইনসমনিয়ার কারণে। এখন জাগি যদি কোনো কাজ থাকে, সেই কাজের জন্যে। কাজ শেষ করেই ঘুমিয়ে পড়ি। অ্যালার্ম দেয়া থাকে। উঠে পড়ি সময় মত। মাঝে মাঝে অ্যালার্মে কাজ হয়না। তখন একদিন বেশী ঘুমাই।
একটু বেশী ঘুমালে সমস্যা কি? কিছু অনিয়ম থাকুক না জীবনে।

@Courtesy: Shuvro bhaia

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন