অনেকদিন পর একটা কিছু লিখতে বসেছি। তাও পরীক্ষার ঠিক আগের রাতে। এমনিও পরীক্ষা আসলে আমি উদাস হয়ে যাই। কেমন যেনও মন মরা লাগে
নিজেকে। শুধু ঘুমাতে ইচ্ছে করে। সেই ফাঁকে মুভিও দেখা হয়। ঘুম, সিনেমা , একাকীত্ব
...এই জিনিস গুলো মনে হয় একে অপরের পরিপূরক। একটাকে ছাড়া আরেকটা চলতে চায়না। সেদিন
ডিনারে বসে মুভিটা দেখা শুরু করেছিলাম। খুবই ইমোশনাল গল্প। বন্ধুত্বের গল্প গুলো
সাধারণত এমনই হয়। সিনেমাটা দেখার পর মনে হল দুই বছর আগে কেনও দেখলাম না! সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সিনেমার অভিনীত সিনেমার কথা তেমন কিছু বলতে
হয়না। অভিনয় দিয়েই তিনি মাতিয়ে রাখেন। সাথে রুপা গাংগুলির অভিনয়, চমৎকার মিশ্রণ।
কিছু অপুর্ন ভালো লাগা, ভালোবাসা,
প্রতিশ্রুতি... মানুষ সারা জীবন বয়ে যায়। কখনো সেটা প্রকাশিত হয়, কখনো হয়না।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়...পথে চলতে আমাদের কত মানুষের সাথে পরিচয়, বন্ধুত্ব
হয়। আর সে বন্ধুত্ব থেকেই মানুষ জড়িয়ে পড়ে গভীর সম্পর্কে। সেখানে কেউ টিকে থাকে, কেউ হারিয়ে
যায়। কেউ আবার হারিয়ে গেলেও মনের মধ্যেই টিকে থাকে। হয়ত কিছু অপূর্ণ কথা, অপুর্ণ
ভালোবাসা থেকেই এমন হয়। মুভিতে পেশায়
অধ্যাপক রুপা গাংগুলি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নামকরা লেখক। দুজনের পরিচয়, বন্ধুত্ব
সেই কলেজ জীবন থেকে। এরপর হয়ত কখনো সেভাবে যোগাযোগ হয়নি। কর্মক্ষেত্রে এসে আবার
কোনভাবে একদিন দেখা হয়, কথা হয়। সেই থেকে আবার কখনো কখনো যোগাযোগ হত, আবার হত না।
কিছু রাগ অভিমান তখনো মনের মাঝে লুকিয়ে থাকে। কারণ ভালোবাসা বৈচিত্র্যময়। রুপা
গাংগুলির স্বামী মারা যাওয়া, রিটায়রমেন্ট শেষে শান্তি নিকেতন ছেড়ে কলকাতায় এসে
বসবাস করছিলেন। চল্লিশ বছর আগের বন্ধু, আরেক বন্ধুর টানে চলে এসেছেন দিল্লী থেকে
কলকাতা। সেই বিখ্যাত লেখক সুমিত যে কলকাতায় বন্ধুর বাসায় এসেছেন কেউ জানত না। কাউকে
না জানিয়েই তিনি এসেছিলেন। কখনো সময় হলে একদিনের জন্য হলেও সংসার করবেন, সেই পুরনো
ভালোবাসার মানুষের সাথে। কিন্তু সেটা অপুর্ণ রেখেই তিনি চলে যান পরপারে। ডিনারে
বসে অনেক গল্প, পুরনো স্মৃতি মনে করা। ডিনার শেষে কেমন খারাপ লাগছিলো। হঠাত মনে হল
সারাদিন ঔষধ খাওয়া হয়নি। বন্ধুকে মন খুলে বলতেও পারছিলেন সমস্যার কথা। বন্ধু ভাবতে
পারছিলোনা এতো রাতে সে একা কি করবে! এভাবেই বন্ধুর চলে যাওয়া বন্ধুকে ফেলে। কিছুই
করতে পারেনি বন্ধুর জন্য। উল্টো মানুষের নানা কথা শুনতে হল। কিন্তু কেউ না কেউ
বুঝে মনের কথা গুলো। আর সেভাবেই শেষ হয়। বন্ধুত্ব গুলো এভাবেই বেঁচে থাকে।
বন্ধুত্বের বিশ্লেষণ সবাই বুঝেনা। সবাই বুঝতেও চায়না। সবার বুঝার দরকারও নেই আসলে।
আমার
এই দেহখানি তুলে ধরো
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে
আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারারাত ফোটাক তারা নব নব
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো
ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে ঊধর্ব-পানে
~রবীন্দ্রনাথ
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে
আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারারাত ফোটাক তারা নব নব
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো
ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে ঊধর্ব-পানে
~রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের অসাধারণ এই গানটি দিয়েই শেষ করা হয়েছে সিনেমাটা।
আমার একটা প্রিয় ম্যুভি এটা। কি অসাধারণ রূপা গাঙ্গুলীর চরিত্রের গভীরতা। সৌমিত্রের স্ত্রীর চরিত্রটাও অনেক সুন্দর। স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যান সুনিপুনভাবে। সৌমিত্র চলে যাওয়ার পর রূপার বাসায় এসে সবচেয়ে হতবাক হন যখন জানতে পারেন নিয়ম করে তিনি সেদিন ওষুধগুলি খাননি, এবং আরো আশ্চর্য হন এই ভেবে যে তার এত কাছের মানুষ (সৌমিত্র) তার অন্য এক কাছের মানুষের (রূপা) কথা কখনোই উল্লেখ করেননি, অথচ তিনি (স্ত্রী) অন্য সব বন্ধুদের কথাই জানতেন। এই না জানার উপলব্ধি কি তিনি সত্যি সহজভাবে নিয়েছিলেন যেমনটা বাহ্যত দেখা যায়?
উত্তরমুছুনআমার কাছে মনে হয়েছে তাঁর স্ত্রী এটা সহজ ভাবেই নিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন এমন একজন আছেন, যার সাথে ২৪ ঘণ্টার জন্য হলেও সংসার করবেন বলে বলেছিলেন। তাঁর স্ত্রী হয়ত এটা বুঝতে পেরে বন্ধুত্বটাকেই বড় করে দেখেছেন বলে আমার মনে হয়। ততে স্ত্রী মেনে নিলেও সমাজ কিন্তু এই বিষয় গুলো সহজে মেনে নেয়না। নানান কথা ছড়াতেই থাকে। সমসাটা যতটা না ব্যক্তি কেন্দ্রিক, ততটাই সমাজ কেন্দ্রিক।
উত্তরমুছুন