''আমি বর্ষা আসিলাম গ্রীষ্মের প্রদাহ শেষ করে
মায়ার কাজল চোখে, মমতায় বর্মপুট ভরি''
শত দুর্ভোগের পরেও বাঙালির প্রাণের ঋতু বর্ষা।
তারপরও মাঝে মাঝে বৃষ্টি আমাদের নিয়ে যায় শৈশবের দুরন্ত দিন গুলোতে। চলতি বছর কাঙ্কখিত বৃষ্টি নেই। বৃষ্টি হলেই মনে পড়ে ছোটবেলার গান "বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান......"
গ্রীষ্মের দিন গুলোতে মানুষ যখন অসহ্য গরমে ছটফট করে তখন বর্ষা আসে প্রবল গরজনের মাধমে মনে আতঙ্ক জাগিয়ে । বাংলার আকাশ ও বাতাস এক নতুন খেলায় মেতে ওঠে। গুরু গুরু গরজনে চারদিক মুখরিত হয়। আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি নেমে আসে। আর প্রকৃতি সাজে নতুন সাজে। মাঝিদের কনঠে ওঠে ভাটিয়ালি গান। আর কৃষক ব্যস্ত থাকে ফসল তোলার কাজে।
নাগরিক জীবনে অনেকটা হুড়মুড় করেই চলে আসে বর্ষা। বর্ষার আগমনে পাল্টে যায় নগর জীবন। বর্ষার আনন্দ ছড়িয়ে যাবে পুরো গ্রাম বাংলায়। তখন মনে হয় নগরীতে বর্ষা মানেই এক অভিশপ্ত যন্ত্রণা। ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তি খুঁজে পায় না নগরবাসী। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই নগরীতে পানি জমে যাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ঘর থেকে পা বাড়ালেই হাঁটু পানি। দুর্গন্ধ, পচা পানি মাড়িয়ে যেতে হয় গন্তব্যস্থলে। কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হলে তো কোন কথা নেই।শহরের নিমাঞ্চলের বাসিন্দারা পানির ওপরেই জীবন কাটায়। ঘরে চুলা জ্বালানোর জো থাকে না, থাকার পরিবেশ যাচ্ছে তাই। সব মিলিয়ে বর্ষায় নাগরিক জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ। বৃষ্টির পানির সঙ্গে যুক্ত হয় ড্রেনের ময়লা পানি, ডাস্টবিনের আবর্জনা। পানি ডিঙ্গিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য একমাত্র বাহন রিকশা। এই সুযোগে রিকশা চালকরা দাম হাঁকিয়ে বসেন ভাড়ার দ্বিগুণ-তিনগুণ। বাধ্য হয়েই যেতে হয় নগরবাসীকে। বর্ষা এলেই শুরু হয় গ্যাস লাইন, পানি লাইন, বিদ্যুৎ লাইন কিংবা টেলিফোন লাইনের কাজ। বছরের আরো পাঁচটি ঋতু রেখে কর্তৃপক্ষের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বর্ষা ঋতুতে এত পছন্দনীয় কেন তা নগরবাসীর বোধগম্য নয়।
শুধু বাইরে নয়, ঘরেও সুখ নেই নাগরিক জীবনে। বর্ষা আসলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার কারণে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায় এবং সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় এডিশ জীবাণু বহনকারী মশা। আর ডেঙ্গুজ্বরে আতংকে ভুগে নগরবাসী। পানিবাহিত রোগের বিস্তার ঘটে এই ঋতুতে। গ্রামের মতো বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দ পায় নগরের শিশুরাও। তবে মাঠের অভাবে তাদের শখ পূরণ করতে হয় বাড়ির ছাদে কিংবা খোলা বারান্দায়। বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা আর পুকুরে সাঁতার কাটার যে স্বর্গীয় সুখ তা থেকে বঞ্চিত হয় নগরের শিশুরা। নগরবাসী উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তরা ছুটির দিনে ঘর ছেড়ে বের হয় না। খাবার টেবিলে বৃষ্টির দিনে শোভা পায় সরষে ইলিশ আর ভুনা খিচুড়ি। কিন্তু ছিন্নমূল মানুষগুলোর দুর্ভোগ ওঠে চরমে। পলিথিন ভেদ করে পানি প্রবেশ করে ছোট্ট খুপড়ি ঘরের মধ্যে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে আশ্রয় নিতে হয় কোন স্কুলের আঙ্গিনায় কিংবা কোন দালানের পাশে। মাঝে-মধ্যে তাতেও তাদের ঠাঁই মিলে না। অনাহারে দিন কাটাতে হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন