বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১১

বিপন্ন গণতন্ত্র



পৃথিবীতে সবার আগে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল এথেন্সে। খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতকে সলোন থেকে পেরিক্লিস পর্যন্ত সংস্কারকগণ অভিজাততন্ত্রের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে যে ব্যবস্থা পাকা করেছিলেন চরিত্র বিচারে বিশ্ববাসী একে গণতন্ত্র নামে আখ্যা দেয়। অনেক পরে আমেরিকায় আব্রাহাম লিঙ্কন যে গণতন্ত্রের উদ্বোধন করেন তাতে জনগণকেই রাষ্ট্রের প্রধান নায়ক বানিয়েছিলেন। সরকার পরিচালকরা জনগণের সেবক মাত্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে গণতন্ত্র একটি অবিভাজ্য শব্দ ও ধারণা। এর আগে ও পরে কোনো শব্দ জুড়ে দিলে তা আর গণতন্ত্র পদবাচ্য হয় না।


আমাদের দেশে গণতন্ত্রের পতাকাবাহী সবাই। গণতন্ত্রের কথা বলে সবাই মুখে ফেনা তুলে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন হয়। এদিক থেকে সব ঠিকঠাক আছে। শুধু বর্তমানের এই নির্ভেজাল গণতন্ত্রে জনকল্যাণের প্রসঙ্গটা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে প্রায় অদৃশ্য থাকে। অদ্ভুত গণতন্ত্রের দেশে এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আসা-যাওয়া। একদল ক্ষমতাসীন হলে নিয়ম করে অন্যদল সংসদ বর্জন করে। এছাড়া সংবিধানকে খোঁড়াখুঁড়ি করেন আর অন্যেরা ছুড়াছুড়ি আর মাখামাখিতে ব্যস্ত। দেশে এখন শুধু খোঁড়াখুঁড়ি আর ছুড়াছুড়িই চলছে। কিন্তু এই খোঁড়াখুঁড়ি, ছুড়াছুড়ি দেশকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে??

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবিধান একটি পবিত্র দলিল। বাংলাদেশের সংবিধান রক্তমূল্যে কেনা। তাতে সময়ের প্রয়োজনে সংস্কার করা যেতে পারে বিধিবদ্ধ নিয়ম মেনে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন ক্ষুব্ধতার সঙ্গে প্রকাশ্য সভায় বলেন ক্ষমতায় এলে সংবিধান ছুড়ে ফেলবেন তখন গণতন্ত্রের প্রতি তাদের যেকোনো শ্রদ্ধা এবং সংবিধানের প্রতি আনুগত্য নেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। আবার মওদুদ আহমদ বলেন তারাও ক্ষমতায় এসে এসব সংশোধনী ফেলে দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো আবার খোঁড়াখুঁড়ি করবেন তখন আর বিস্ময়ের কিছু থাকে অর্থাত্ দেশটা যেন শুধু বিএনপি ও আওয়ামী লীগের। আবার কেউ ডাস্টবিনেও ফেলে দিবেন। আমারা কতটা নিচু হলে আমাদের মুখ দিয়ে এসব কথা বের হয়। তাহলে চিন্তা করুন দেশ এখন কোন অবস্থায় আছে!!!

আজ সারা দেশে এক ভয়াবহ অবস্থায় বিরাজ করছে। আমাদের ভবিষ্যৎ কি তা আমরা আজ বলতে পারিনা। শুধু এইটুকু বুঝতে পারি যে আমরা আগামীতে অনেক বড় একটা সংঘাত দেখতে পাবো। যার খেসারত দিতে হবে আমাদের মত সাধারন জনগণকে। কারণ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে একের পর এক সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ঠিক আড়াই মাসের মাথায় আমরা হারালাম আমাদের দেশের ৫৪ টি মানবসম্পদ। এছাড়া দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আজ সরকারি দলের কাছে জিম্মি। ছাত্রদের মেরে ছুড়ে ফেলে দেয়া, কি আজব কাজ কারবার!!! শেয়ার বাজার, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিডিয়ার বিদ্রোহ, প্রশাসনিক জটিলতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু, একের পর এক দুর্ঘটনা, সব মিলিয়ে দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় দেশ কোন দিকে যাচ্ছে তার দিকে কারো খেয়াল নেই। এর মধ্যে সবাই সংবিধান ছোড়াছুড়ি,মাখামাখি নিয়ে ব্যস্ত।

সরকার ও বিরোধী দলের বিপরীতমুখি অবস্থানের কারণে দেশে আবারও সঙ্কটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, এমনটাই মনে করছেন রাজনীতিক, আইনজীবী ,অর্থনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও সেনা কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘দেশের যে কোনো পরিস্থিতির জন্য দুই দলই দায়ী থাকবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি দেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করছে। দেশের এই সংঘাতময় পরিস্থিতি দেশকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা অর্থমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যেই পরিস্কার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘দেশে এখন কী চলছে, জনগণের জন্য কিছু একটা করার জন্য যতটা না তার চেয়ে বেশি এক অপরকে ঘায়েল করার জন্য ভর্ৎসনা ও কুৎসা।

এ অবস্থায় সুস্থ চিন্তার মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করেন তবে রাজনীতি সুস্থ ধারায় ফিরবে না। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর আজ আমাদের ভাবতে হবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে আমরা গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চাই কি না। এ সত্য মীমাংসিত যে, দেশপ্রেমিক সুস্থ মানুষদের চাওয়ার ইচ্ছাটা অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন