মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি


বছর ঘুরে বাঙালির দুয়ারে 'অমর একুশে' কড়া নাড়লেই প্রাণে প্রাণে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হয় এ অমোঘ বাণী। আজ সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, অমর শহীদ দিবস। অমর একুশে শাশ্বত বাঙালির হৃদয়ে, মননে ও জীবনাচরণের এক ঐক্যসূত্র। স্মৃতির প্রাত্যহিকতায় একুশ অনন্য উজ্জ্বল একটি দিন। পলাশ,  শিমুল, রক্তরাগে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে আসে বসন্ত। বসন্তের সম্মিলনে আমাদের চেতনায় আল্পনা এঁকে দেয় অমর একুশ। স্বজন হারানোর বেদনা আর অধিকার আদায়ের আনন্দে উদ্বেল একুশে ফেব্রুয়ারি তাই তো জাতির জীবনে অবিনশ্বর এক মহাউদযাপনে পরিণত হয়েছে বছরের পর বছর। এমন কালজয়ী দিন, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-দল-মত নির্বিশেষে উদযাপন করার জন্য সত্যিই দ্বিতীয়টি নেই।


কৃষ্ণচূড়ায় সদ্য ফোটা ফুল ডালে বসা কোকিলের ডাক যেন একুশেরই আহ্বান। পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্তির পর স্বাধীনতায় উত্তরণের দিনগুলো থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিবছর যে মহান একুশে উদযাপন করা হয় তার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সেখানেই। বাঙালির রক্তে, অস্থিমজ্জায় মিশে আছে একুশের চেতনা। ধর্ম-বর্ণ-ভাষা নির্বিশেষে সমতলের, পাহাড়ের, নদীতটের, বালুচরের মানুষ সমঅধিকার নিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করবো।

বায়ান্নর একুশের এই চেতনার পথ ধরেই এ দেশের মানুষ ১৯৬৬ তে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলে। ছয় দফার আন্দোলন ঊনসত্তরে স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ নেয়। সে আন্দোলন একাত্তরে অসহযোগ আন্দোলনে পরিণত হয়। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু মুজিবের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায় বীর বাঙালি। 

মধুর চেয়ে মধুর যে ভাই আমার দেশের ভাষা
এই ভাষাতে ফোটে আমার দুঃখ-দরদ আশা।
এই ভাষাতে পুঁথি-গাথা মারেফতী লিখি,
এই ভাষাতে ভাটিয়ালী ভাওয়াইয়া গান শিখি।
এই ভাষাতে মেটে আমার মনের পিয়াসা।।
এই ভাষাতে ফোটে রে ভাই সকল কান্না হাসি,
এই ভাষাতে দুঃখে-সুখে গাই যে বারমাসী,
এই ভাষাতে যায় রে ভাবের আঁধার কুয়াশা।।
পাক জমিনের মত আমার পাক বাংলার মান
না শুনিলে মাতৃভাষা মন করে আনচান,
মায়ের ভাষা শুনলে মনে না থাকে নৈরাশা।।
।~~ফররুখ আহমদ~~। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন