সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

প্রাণের উৎসবঃ বইমেলার দিনলিপি-২


বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ছিলো বাঙালির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের বাংলা একডেমী আয়োজিত অমর একুশে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন বাংলা একাডেমীর পরিচালক ছিলেন প্রয়াত কবীর চৌধুরী। জাতীয় চেতনার বিকাশে বাংলা একডেমীর ভুমিকা ছিলো অনেক। যা কখনো অস্বীকার করার মত নয়। এভাবে গবেষণা-প্রকাশনা কার্যক্রমের পাশাপাশি এই রকম বই মেলার আয়োজন করা অনেক কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। এটা আমাদের জাতির সাংস্কৃতিক বোধকে শাণিত করবে। নিঃসন্ধেহে এটা আমাদের জন্য একটা গৌরবের বিষয়।


সেদিন ছিলো বই মেলার ৩য় দিন। আর আমার ছিলো ২০১২ সালের বইমেলার ২য় দিন। সেদিন খুব সুন্দর ভাবেই গিয়েছিয়ালাম বই মেলায়। ঢাকার রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিলো। গিয়েই দেখি বিশাল লাইন!! লাইন দৃঢ় পায়ে আস্তে আস্তে যাচ্ছিলো। ওহ, আরেকটা মজার ব্যাপার হল, সেখানে শুধু বই মেলা হচ্ছিলো না, শিশু মেলাও হচ্ছিলো। শিশুদের অনেক সুন্দর সুন্দর খেলনা দেখলাম। অনেকেই দেখছি খুব আগ্রহের সাথেই কেনাকাটা করছেন। যাক, ভালোই! এক ডিলে দুই পাখি মারা হল। বইও কেনা হল, খেলনাও কেনা হল।

মেলায় সেদিন খুব বেশী পরিমান ভীড় ছিলো। এতো বেশী মানুষ যে কাউকে পাছ করে সামনে যাওয়ার ফ্লো ছিলো না। তারপরেও অনেক কষ্ট করে হাল্কা সরিয়ে দিয়ে আমি কেটে গেলাম। তারপর এদিক সেদিক একটু ঘুরে দেখালাম। তারপরে আবার সেদিন ছিলো তানিম ভাইয়ার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। আমি লেট করে আসাতে মিস করেছিলাম। হঠাৎ ভুলে গিয়েছিলাম যে বইটা কোন প্রকাশনীর ছিলো। তখন আমার কাছের একজনকে ফোন দিয়ে জেনে নিয়েছিলাম যে সেটা জাতীয় গ্রন্থমেলা প্রকাশনী। তারপর সেখানে গিয়ে দেখি তানিম ভাইয়া খুব ব্যস্ত। আমি পাশ কাটিয়ে দোকানদারকে বললাম ভাই একটা পিস মৌনমুখর বেলায় বইটা একটু দেন তো। তারপর তানিম ভাইয়া উপরের দিকে তাকিয়ে চিরচেনা একটা হাসি দিলো। শেষে একটা অটোগ্রাফও দিয়ে দিলেন। কিন্তু তানিম ভাইয়ার মিষ্টিটা খাই খাই করে আর খাওয়া হল না। আফসুস!! তখন সেখানে আরো অনেকেই ছিলো। আরজেপনি আপু, রুমকি আপু, নিশাচর ভবঘুরে, সাদা মনের মানুষ, সাহেদ খান, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ভাইয়া। এরপর হঠাৎ দেখলাম কবির ভাইকে। তিনি পাশ কাটিয়ে বই দেখছিলেন। আমি দেখে ফেললাম। তারপর অনেক কথা হল সবাই মিলে। তাঁদের সবাই ছিলো সামুর ব্লগার। সবার সাথে দেখা হয়ে ভালো লেগেছিলো। তারপর তানিম ভাইয়া সহ গেলাম লিটলম্যাগ চত্তরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তানিম ভাই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর লিটলম্যাগ চত্তরে গিয়ে দেখি লুবনা আপা, দুলা ভাই জামান আরশাদ, জিয়া রায়হান, ফকির আব্দুল মালেক, হরবোলা, ভালোবাসার দেয়াল ভাই। তারপর সবার সাথে কিঞ্চিৎ কথা হল। সবাই তখন বের হওয়ার জন্য রেডি আর আমি সেই মুহূর্তে গেলাম। তারপরেও সবার সাথে ক্ষণিকের দেখা হয়ে অনেক ভালো লেগেছে।

তারপর গেলাম ভাষাচিত্রের স্টলে। সেখান থেকে কিনলাম ব্লগার রোদেলার ফাগুন ঝরা রোদ্দুর। আলোতে ব্লগার আনন্দময়ী আপার সেই পোস্ট দেখে এটা কেনার আগ্রহ হয়েছিলো। তারপর বই কিনে তানিম ভাইয়ের সাথে দেখা করে বের হয়ে গেলাম। তারপর উঠলাম ফাল্গুন বাসে। উঠেই দেখি ফাঁকা বাস। পরিবেশটা ভালোই লাগছিলো। তাড়াতাড়ি রোদেলা আপুর বইটা বের করে পড়া শুরু করলাম। বইয়ের নামের সাথে বাসের নামের অন্তমিল। ফাল্গুন বাসে ফাগুনের বই। ভালোই লাগছিলো। কিঞ্চিৎ হাসিও পাচ্ছিলো। এরপর তানিম ভাইয়ার বইটাও একটু দেখলাম। পড়তে পড়তে বাসায় চলে আসলাম। অনেক মজার কিছু সময় অতিক্রম করলাম।


ফাগুনঝরা রোদ্দুরঃ
এটি ব্লগার রোদেলা আপুর লিখা বই। ২০১০ সালের বই মেলায় এটি প্রকাশিত হয়েছিলো। অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা দিয়ে বইটি সাজানো। আমাদের জীবনযাত্রা তার কবিতায় প্রাধান্য ছিলো। এছাড়া উৎসব, প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ সব কিছুই আছে তাঁর কবিতায়। অনেক ভালো লেগেছে বইটি।

মৌনমুখর বেলায়ঃ
এটি লিখেছন ব্লগার রেজওয়ান তানিম। তাঁর বইটিতে ছিলও কিছু ভিন্ন ধাঁচের কবিতা। তাঁর কবিতা গুলোতে উঠে এসেছে জন্ম-মৃত্যু, প্রেম, ভালোবাসা, বিদ্রোহ,ও নষ্ট হওয়া মানুষের কথা। অনেক ভালো লাগলো এই বইটিও।

আশা করছি সবার বই গুলো পাঠক সুন্দরভাবে গ্রহন করবে।
সবার জন্য শুভকামনা রইল।
ভালো থাকবেন সবাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন