একুশে বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। বাংলা একডেমীর প্রাঙ্গনে শুরু হয়েছে মাস ব্যাপী প্রাণের বই মেলা। এবারের বই মেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর’. আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস মিশে আছে এই মেলায়। ১৯৭২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি বাংলা একডেমীর বটতলায় ৩২টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করে মুক্তধারা। ক্ষুদ্র থেকে সেটা এখন বৃহৎ আকার ধারন করে এখন এটা প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। এটা এখন আমাদের জন্য গর্বের বিষয়!
গতকাল ছিলো বই মেলার ২য় দিন। আর আমার ছিলো ২০১২ সালের বইমেলার ১ম দিন। চিরচেনা সেই জ্যাম অতিক্রম করে গিয়ে পৌছলাম টি.এস.সি। ঢুকতেই দেখি সেখানে আরেক উৎসব হচ্ছে,সেটা হল পিঠা উৎসব। মজার মজার সব পিঠা দেখে লোভ সামলাতে পারছিলাম না। কিন্তু দাম দেখে হাল্কা পেট ভরিয়ে নিয়েছিলাম। তারপর তাড়াতাড়ি এক বোতল পানি কিনে কিছুটা সামলে নিলাম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। মনটা অস্থির অস্থির লাগছিলো! তারপর ঢুকে গেলাম সেই চিরচেনা বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গণে। প্রথমেই পুরা মেলাটা একবার ঘুরে দেখলাম। কোথায় কি আছে একনজর দেখে নিলাম। কোথায় কোন প্রকাশনী বসল তাও এক নজর দেখে নিলাম। তখনো মেলার কাজ ছিলছিলো। সবাই নিজেদের কাজে অনেক ব্যস্ত ছিলো।
তারপর একে একে প্রিয় সব মানুষদের সাথে দেখা হচ্ছে। ব্লগার জ ই মানিক, শাহাদাত উদরাজি, জুলিয়ান সিদ্দিকী, আকাশগঙ্গা, ডাক্তারের রোজনামচা, মিসেস রোজনামচা, রেজওয়ান তানিম, আমিন শিমুল, ফয়সাল কাদের ভাইয়া ও নাজমুল হুদা স্যার সহ আরও অনেকে। এই প্রথম সব প্রিয় মুখের দেখা পেলাম। ব্লগার আকাশগঙ্গার শ্রদ্বেয় পিতা বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। খুব সুন্দর ভাবেই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হল। বারোজন ব্লগার থেকে সেখানে আটজন ব্লগার উপস্থিত ছিলেন। তারপর মানিক ভাই আমাকে সরলরেখা বক্ররেখার এক কপি আমাকে উপহার হিসেবে দিলো। কি মজা লাগছিলো। বইমেলায় গিয়েই উপহার দিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। তারপর তাঁদের বইয়ের স্টল অন্যপ্রকাশের দিকে গেলাম। সেখানে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদের মেঘের ওপর বাড়ি বইটি আর সরলরেখা বক্ররেখার আরেকটি বই কিনলাম। তারপর একে একে অটোগ্রাফ নিচ্ছিলাম সেই বারো জনের কয়েকজন থেকে। সবাই এক কলম দিয়েই চালিয়ে দিলেন। শেষ পর্যন্ত পাঁচ জনের অটোগ্রাফ নিলাম। উদরাজি ভাইয়া আর জুলিয়ান ভাইয়া নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে তাঁদের আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
তারপর সবাইমিলে ফুসকা আর চা খাওয়া হল। ফুসকা বেশ ঝাল লাগছিলো। মোটামুটি টেস্টিও ছিলো। কিছুক্ষণ পরেই যোগ দিলেন কবির ভাই। অনেকদিন পর প্রিয় মুখের দেখা পেলাম। খাওয়া শেষ করে সবাই মিলে একটু ঘুরাঘুরি করলাম। তারপর একে একে বিদায় নিয়ে গেলেন। আমি আর কবির ভাই ঘুরতে ঘুরতে লিটল ম্যাগ চত্বরের দিকে গেলাম। তারপর দেখালাম জিয়া রায়হান ভাই আর তানিম ভাই দারুণ আলাপচারিতা করছেন। সেই ফাঁকে আমি শব্দতরী আর ব্লগার মরু বেদুইন ভাইয়ার খোকাখোকীর ছড়ার বইটা কিনে নিলাম। এরপর গেলাম আমার ব্লগের স্টলে। সেখান থেকে কিনলাম সজল শর্মা ভাইয়ার ব-দ্বীপ রাতের শায়েরী বইটা কিনলাম। অতপর বইমেলা থেকে বের হয়ে গেলাম। আবার সেই চিরচেনা জ্যাম কাটিয়ে বাসায় ফিরলাম। তারপরে রাতেই পড়া শুরু করে দিলাম বই পড়া। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শেষ করলাম সরলরেখা বক্ররেখা, খোকাখোকি ও পাখির কথা এবং ব-দ্বীপ রাতের শায়েরী। এছাড়া শব্দতরীর আর মেঘের উপর বাড়ির কিছু অংশ পড়েছিলাম। পুরা শেষ করতে পারিনি।
সরলরেখা বক্ররেখাঃ
বারোয়ারী উপন্যাসটি বারোজন ব্লগার মিলে লিখেছেন। তাঁরা হলেন চতুর, নীড় আর অন্তরনামা ব্লগের ব্লগার। বইটা বেশ আগ্রহ নিয়েই পড়েছিলাম। পড়ার সময় মনেই হয়নি যে এটা বারোজনে লিখেছেন। উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের বাস্তব জীবনের প্রতিছবি। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে মানুষের জীবনবোধ কিভাবে সরলরেখা থেকে বক্ররেখায় গমন করে তার মারপ্যাঁচ। জীবনের এই ক্ষীণ সময়ে কিভাবে প্রেম-ভালোবাসা, বন্ধুতা গড়ে উঠে। এর মাঝেই মিশে আছে সুখ-দুঃখ আর হাসি-কান্না আর অজস্র ভালোবাসা। আছে অজানা অনেক কথামালা। উপন্যাসে অনেক সুন্দর সুন্দর উপমা ইউজ করা হয়েছে। লিখার ফাঁকে ফাঁকে উপমা গুলো লিখাকে আরও বেশী আকর্ষনীয় করে তুলেছে। অনেক ভালো লাগলো বইটি।
খোকাখোকির ও পাখির কথাঃ
এটি ব্লগার মরু বেদুইন ভাইয়ার লিখা বই। খুব অল্প সময়েই বইটি শেষ করলাম। কিছু সময়ের জন্য আমিও খোকা হয়ে গিয়েছিলাম। অসাধারণ সব ছড়া দিয়ে বইটি সাজানো। অনেক ভালো লাগা রইল।
ব-দ্বীপ রাতের শায়েরীঃ
বইটি ব্লগার সজল শর্মার লিখা। এতে লিখা হয়েছে পারস্য সাহিত্যের শেরও রুবাই এর যুগ্ম রূপ। শায়েরী গুলো পারস্য সাহিত্যে থেকে অনুপ্রাণিত। এতে আছে সুখ-দুঃখ আর গ্রাম বাংলার প্রতিছবি। এছাড়া এতে উঠে এসেছে ব্যক্তিগত ও সামস্টীগত কিছু লিখা। কখনো উঠে এসেছে প্রেম বিরহ আর আবহমান জীবন ঘিরে। কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যেই এই বইটাও শেষ করে ফেললাম। অসাধারণ ভালো লাগা।
শেষ পর্যন্ত পড়ছিলাম শব্দতরী আর হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের কিছু অংশ। শব্দতরীতে একসাথে অনেক কিছু লিখা আছে। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, স্মৃতিচারণ, মুক্তগদ্য ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখা। আর হুমায়ূন আহমেদের বইতো জানেনই, তিনি কি ধরনের লিখা লিখেন সেরকমই।
সব কিছু মিলিয়ে দারুণ কেটেছে বই মেলার প্রথমদিন। আলোকিত সব মানুষদের সাথে দেখা হল। খুব খুব ভালো লেগেছিলো। শুভকামনা সবার বাইয়ের জন্য। সবাই অনেক অনেক ভালো থাকবেন। বেশী বেশী বই পড়বেন। শুভেচ্ছা সবাইকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন