চলছে জমজমাট একুশে বই মেলা। বছর ঘুরে ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বেজে উঠে একুশের সুর। এ মেলায় প্রতিদিনই ভিড় করছে বইপ্রেমী নানা বয়সের মানুষ। বসন্তের বিকেলে প্রতিদিন ক্লান্তি অবসাদ সবকিছুকে ছাপিয়ে বইমেলায় ভিড় জমায় নানা বয়সের মানুষ। ভিড়-ভাট্টা, হট্টগোল কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনা নতুন বইয়ের গন্ধ নেওয়ার আকুলতার কাছে। মেলাসংলগ্ন রাস্তায় নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র ও গাড়ির বিতিকিচ্ছিরি শব্দ, ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে গেলো বইপ্রেমী মানুষের পদচারণ আর প্রাণের কোলাহল। ছেলে বুড়ো সবার পদচারণ মুখরিত হয় মেলার প্রাঙ্গন।
পড়ন্ত বিকেলেই গিয়ে পোঁছলাম শাহবাগ। রাস্তার দু’পাশ ঘেসে মানুষের পদচারনা। কিছুদূর এগিয়েই দেখি অজগরের মত বিশাল লম্বা এক লাইন। আমি একটু ভেবে সামনে হাঁটতে থাকি। কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মানিক ভাইকে ফোন দিলাম সাথে সাথে। তারপর হঠাৎ করেই একটা ক্লু খুঁজে বের করলাম। সোজা টিএসসি’র চা, বিড়ি-সিগারেটের দোকান ঘেঁষে হাঁটতে শুরু করলাম। একদম ভিতরের দিকে এসে লাইনের শুরুতে একটু জায়গা করে নিলাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রবেশ করে ফেললাম জায়গা মত। সোজা নজরুল মঞ্চে চলে গেলাম। গিয়েই দেখি হুদা ভাই, উদরাজি ভাইও মানিক ভাই মঞ্চের বেদিতে দাঁড়িয়ে আছে। ঐ দিকে পারভার্টের মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে। বইটির মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন বুদ্ধদেব গুহ। এছাড়া সেখানে ছিলেন ফয়সাল ভাইয়ের বাবা, ছাত্র-ছাত্রী, চতুরের ব্লগাবৃন্দ সহ আরও অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী। মঞ্চে তখন কানায় কানায় ভর্তি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে গেলো পারভার্টের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
মঞ্চ থেকে নেমে ফয়সাল ভাই অটোগ্রাফ দিতে খুবই ব্যস্ত ছিলেন। এদিকে উদরাজি ভাইয়া আর হুদা ভাইয়া ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এর মধ্যেই পলাশ ভাই নিয়ে এলেন মিস্টির প্যাকেট। সবাই মিষ্টি মুখ করছেন, এমন সময় হাজির হল নিয়াজ ভাইয়া আর একুয়া আপু। মানিক ভাই চাঞ্চে আপুর হাতে উঠিয়ে দিলেন ‘ইরিডেনাস’, দিতে হবে অটোগ্রাফ! নেই কলম! নিয়াজ ভাইয়ের পকেট মাইর দিয়ে কলম হাজির করলেন। একুয়া আপু তো পড়ে গেলেন বিপদে! ঐ দিকে মিষ্টি যায় যায় অবস্থা! এই ফাঁকে কিন্তু মিষ্টি দুটা খেয়ে শেষ করে ফেললেন। অন্যদিকে অটোগ্রাফের পর্ব অর্ধেক শেষ করতেই ফয়সাল ভাইয়ের ঘাম বের হয়ে গেছে। একে একে অনেকেই পরিচিত হলেন ফয়সাল ভাইয়ের বাবার সঙ্গে।
সবাই মিলে রওনা দিলো শৈলী প্রকাশনীর দিকে। সেখানে গিয়ে দেখি ফয়সাল ভাই আবার অটোগ্রাফ দিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আমি আর মানিক ভাই পারভার্টের দু’কপি নিলাম। বাকি কাজটা ফয়সাল ভাই সেরে দিলেন। ফিরার সময় দেখি মেঘ অদিতি আপু। দেখেই চিনে ফেললাম। বই মেলার অন্য আরেকদিনের সুবাদের চিনতে কোন সমস্যা হয়নি। মানিক ভাই দেরি না করে ধরিয়ে দিলেন ‘জল ডুমুরের ঘুম’. পর্যায়ক্রমে দুজনকেই অটোগ্রাফ দিলেন। এর মধ্যে পাশা ভাই ফোন দিলো মানিক ভাইকে। পাশা ভাইকে খুঁজতে খুঁজতে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। এমনি ভিড়ের মধ্যে হাটা যায় না। তারমধ্যে আবার খোজাখুজি!! ঐ দিকে রশিদ ভাই দাঁড়িয়ে আছে নজরুল মঞ্চের কাছে। মানিক ভাই পাশা ভাইয়ের খোঁজে গেলেন আর আমি চলে গেলাম রশিদ ভাইয়ের খোঁজে। এদিক সেদিক খোঁজাখোঁজির পর পেয়ে গেলাম রশিদ ভাইকে, সাথে ছিলেন বাবুল হোসেইন ভাই। আবার হারিয়ে খুঁজে নিলাম মানিক ভাইকে। সবাই মিলে গেলাম জাতীয়গ্রন্থ প্রকাশনীর সামনে। সেখানে গিয়ে দেখি পাশা ভাই, কবির ভাই, তানিম ভাই সহ আরও অনেকে। আমরাও কিছুক্ষণের জন্য তাদের সাথে শরিক হলাম। তারপর আমি কবির ভাই আর রশিদ ভাই মিলে চলে গেলাম প্রতিভা প্রকাশনীর দিকে। কবির ভাই রশিদ ভাইয়ের ‘রাজনৈতিক ভেলকি’ ও ‘বিলেতের হাওয়া’ বই দুটা ক্রয় করলেন, সাথে অটোগ্রাফ ফ্রি দিলেন।
এরপর যাত্রা করলাম লিটলম্যাগ চত্বরের দিকে। ঢুকতেই দেখি নীলসাধু ভাই আর আলীম ভাই। হাল্কা কথা সেরে সামনের দিকে একটু এগিয়ে গেলাম, দেখি বহুরূপী কুহক ভাই। তারপর গেলাম গদ্যপদ্যের স্টলে। কুহক ভাই ধরিয়ে দিলেন পঞ্চপত্রের উপপাদ্যের এক কপি। সাথে ফ্রি দিলেন একটু ভালবাসা। যদিও আমি আগে এক কপি সংগ্রহ করেছিলাম।আবার ফিরে এলাম লিটলম্যাগ চত্বরে। এখানে দেখি দারুণ আড্ডা জমে উঠেছে। লুবনা আপু, দুলাভাই জামান আরশাদ, জিয়া ভাই, মাহবুব ভাই, মান্নান ভাই, জাকির ভাই, মালেক ভাই, নিয়াজ ভাই, হুদা ভাই, তানিম ভাই, রশিদ ভাই, কুহক ভাই, আলীম ভাই সহ আরও অনেকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার সাথে আড্ডার শরীক হয়ে গেলাম আমিও। লুবনা আপু একের পর এক সর্ট নিচ্ছেন। মনে হচ্ছে তিনি বিশাল দায়িত্ব নিয়েছেন। কতকরে বললাম, এবার দায়িত্ব আমার হাতে দেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা, কোন ভাবেই রাজি হল না। তারপর আর কি করা! তখন পুরা লিটলম্যাগ চত্বরেই ব্লগাদের খন্ড খন্ড আড্ডা চলছে। আড্ডার সাথে চলছে চা-কফি, সিগারেট!! পুরা লিটল ম্যাগচত্বরটি তখন মোটামুটি ব্লগাদের দখলে বললেই চলে। কিছুক্ষণ পরেই মাহবুব ভাইয়ার লিখা বই ‘অন্তরগৃহ’, ‘নীড়পদাবলী’ ব্লগারদের কবিতা সংকলন, এবং ব্লগাদের লিখা ‘নীড় গল্প গুচ্ছ’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হল। মোড়ক উন্মোচন করেছেন বাংলা একডেমীর ডেপুটি ডাইরেক্টর আমিনুর রহমান সুলতান। এছাড়া ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও উপন্যাসিক পারভেজ হোসেন। তারা কিছু কথা বলেই শেষ করেন মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। মোড়ক উন্মোচনের পরেই আবার যোগ দিলেন নীলসাধু ভাই আর কবির ভাই। ধুমায়া সবাই মিলে আড্ডা দিলাম। এর মধ্যেও মানিক ভাই আবার নিখোঁজ হয়ে গেলেন। ফোন দিয়ে জানলাম তিনি বাইরে হুকা টানছেন। এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। গিয়ে দেখি সেখানে আবার নতুন করে আড্ডা জমেছে। সেখান থেকেই একে একে বিদায় নিলেন। সেদিনকার মত আড্ডা শেষ হল এখানেই। বইমেলায় স্মরণীয় একটা দিন বলতেই হবে।
পঞ্চপত্রের উপপাদ্যঃ এটি আলো ব্লগের পাঁচ কবির লিখা কাব্যগ্রন্থ। সবাই যার যার অবস্থান থেকে ভালোই লিখেছেন। এই কাব্যগ্রন্থে ফুটে উঠেছে দ্রোহ, প্রেম, ভালোবাসা, এবং মানুষের জীবনের নানা অব্যক্ত কথামালা। কিছু কবিতা পড়ে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। অনেক অনেক ভালো লাগলো।
জল ডুমুরের ঘুমঃ এটি লিখেছেন ব্লগার মেঘ অদিতি। এটা প্রচলিত কবিতা এবং গল্পের বাইরে লিখা একটি বই। অনেকটাই লেখকের নিজের অবেগ অনুভূতি মিশিয়ে লিখা। জীবনের বাঁকে বাঁকে নিজেকে হারিয়েও খুঁজে নিয়েছেন। সুন্দর ভাবেই লিখেছেন জীবনের নানা বিচিত্রতা, নানা অব্যক্ত কথামালা। অনেক ভালো লাগলো আবেগী কথামালা।
সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
ভালো থাকবেন সবাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন