বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত বাংলা চলচিত্রঃ গেরিলা


নাসির উদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী নিয়ে নির্মিত বাংলা চলচিত্র গেরিলা। সৈয়দ সামসুল হকের নিষিদ্ধ লেবানন উপন্যাস এবং পরিচালকের কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত হয়েছে গেরিলা। ছবিটিতে অভিনয় করেছেনঃ
জয়া আহসান- বিলকিস বানু
ফেরদৌস- হাসান আহমেদ
পীযূষ বন্দোপাধ্যায়- আনোয়ার হোসেন
আহমেদ রুবেল- আলতাফ মাহমুদ 
শতাব্দী ওয়াদুদ-ক্যাপ্টেন শমসদ/মেজর সরফরাজ
শম্পা রেজা- মিসেস খান
এটি এম সামসুজ্জামান- তসলিম সর্দার
আজাদ আবুল কালাম- তৈয়ব
জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, মাসুম আজিজ, কচি খন্দকার সহ আরো অনেকে।


বিলকিস ছিলো এই সিনেমার মূল চরিত্র। ২৫শে মার্চ রাতে বিলকিসের স্বামী হাসান নিখোঁজ হন। তারপরেও বিলকিস বানু ভেঙ্গে না পড়ে নিজেকে সক্রিয় রেখেছে। বাঙালির স্বাধীনতা মন্ত্রে উজ্জীবিত বিলকিস অসুস্থ শাশুড়ি, নিজের চাকুরী, স্বামীর খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন বাঙালি মুক্তি যুদ্ধাদের। বিলকিসের মত অনেক নারীও নানা উপায়ে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানী বর্বরতা, বাঙ্গালীর প্রতিরোধ আর স্বাধীনতার দাবী দেশে বিদেশে ছড়িয়ে দিতে সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি বিলকিস সহযোদ্ধাদের সাথে একটি পত্রিকার কাজেও যোগ দেয়, যার নাম "গেরিলা". আলতাফ মাহমুদের বাড়িটিকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধাদের অভিযান গুলো পরিচালিত হত। ছবিতে আলতাফ মাহমুদের চরিত্রে অভিনয় করছে আহমেদ রুবেল। অভিভাবকের মতো স্নেহে-পরামর্শে বিলকিসকে ছায়া দেন আলতাফ মাহমুদ। মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র রাখার কারণে আলতাফ মাহমুদ পাকিস্তানীদের কাছে ধরা পড়েন। সেজন্য সময়ের আবর্তে এক সময় বিলকিস বানুকে ঢাকা ছাড়তে হয়। তারপর বিলকিস বানু একাকী চলে যায় তার রংপুরের নিজ গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধারা রেলব্রীজ ভেঙ্গে দেয়ার কারণে যাত্রাপথে ব্যাঘাত ঘটে। তারপর তাকে সহযোগিতা করেন তার ভাইয়ের সহযোদ্ধা সিরাজ। বাড়ির পথে নানা ঘটনার পাশাপাশি নিজের বাড়ী লুট হওয়া আর আপন মামার উপর মিলিটারী-রাজাকারদের নির্যাতন দেখে শিউরে উঠে সে। তারপর একমাত্র ভাই খোকনকে দেখবার তীব্র আকাংখায় জাগে বিলকিসের। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এরইমধ্যে জবাই করা হয়েছে খোকনকে। ভাইয়ের লাশ দাফন করতে গিয়ে বন্দি হয় পাকিস্তানী মিলিটারীর হাতে। তবে শেষ পর্যন্ত বীরের মতো আত্নাহুতি দেয় বিলকিস। মানুষের জন্য, দেশের মুক্তির জন্য, নিজের সম্ভম্ররক্ষার জন্য নিজেকে আত্মোৎস্বর্গ করে । নিজের সাথে উড়িয়ে দেয় একটি গোটা মিলিটারী ক্যাম্প।

এশিয়ার সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে গেরিলা। কলকাতায় অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র উত্সবে অংশ নিয়ে এ গৌরব অর্জন করেছে সিনেমাটি। পুরস্কারের নাম নেটপ্যাক (নেটওয়ার্ক ফর দ্য প্রমোশন অব এশিয়ান সিনেমা). হয়তো নিজে মুক্তিযোদ্ধা বলে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা থেকে নাসির উদ্দিন ইউসুফ গেরিলাকে এতটা জীবন্ত করে তুলতে পেরেছেন। তবে এই ছবিটার দৃশ্যগুলো খুবই সুন্দর ছিলো। অসাধারণ অভিনয় করেছে জয়া আহসান(বিলকিস বানু). ছবিতে পাকিস্তানি মিলিটারির ভুমিকা পালন করে শতাব্দী ওয়াদুদ। এছাড়া ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাকিস্তানদের বর্বরতা এবং রাজাকারদের অমানষিক নির্যাতন। ছবির অন্যান্য কলাকুশলীরাও প্রশংসার দাবিদার। ছবিটিতে ছিলো সাতটি গান। চারটি গান ছিলো শহীদ আলতাফ মাহমুদের সুর করা। পুরুস্কার অর্জনের মাধ্যমেই এই ছবির সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে। 
তবে, এখানে দাড়িকে কিছু ক্ষেত্রে অবমাননা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে কি শুধু দাড়িওয়ালা লোকেরাই কি রাজাকার ছিলো!? দাড়িওয়ালা লোকেরাই কি সব অত্যাচার নির্যাতন করেছে!? আর বাকিরা কি সব সাধু ছিলো?! কখনোই না!! কিন্তু এখানে বার বার এটাই তুলে ধরা হয়েছে!! এখানে ইসলামকে অনেকটা বিকৃত বলেই প্রকাশ করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ ভুল! একজন মানুষ ইসলামের কথা বললে, দাড়ি-টুপি রাখলেই সোজাসুজি তাকে পাকিস্তান পন্থি, জামাত পন্থি বা রাজাকার বলে দেয়া যায় না। এটা তার ধর্মীয় ভাবধারা থেকে আসতে পারে বা হতে পারে। এছাড়া অন্য কোন কারণও থাকতে পারে। এর মানে এই নয় যে তারাই পাকিস্তান পন্থি, জামাত পন্থি বা রাজাকার! জয় বাংলা স্লোগান দিলেই আওয়ামীলিগ হয়ে যায় না! জয় বাংলা স্লোগান কারো নিজের সম্পত্তি নয়, এটা এদেশের লক্ষ্য-কোটি মানুষের। কোন এক পোস্টারে কুকুরের মাথায় টুপি পড়িয়ে তাকে রাজাকার বা জামাতি বলা হয়েছিলো!! এধরনের প্রচারণায় অনেকেই বিভ্রান্ত হন এবং ধর্মের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন। এধরনের রাজাকার বানানো আমাদের কোন সুফল বয়ে আনে না বরং ক্ষতিই বয়ে আনে। এগুলো আমাদের অনেককেই বুঝতে হবে।


বর্তমান সমাজে মুক্তির চেতনাকে অনেকেই ফ্যাশন হিসেবে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। পেপার খুললেই অনেক বড় বড় কলাম দেখা যায় আমাদের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে। কিন্তু কয়জন কলাম লেখক বা কয়জন মানুষ আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি! পাশে এসে দাঁড়াতে বললেই সেটা এড়িয়ে যাওয়া হয়! তখন কোথায় থাকে আমাদের মুক্তির চেতনা?! মুখে বড় বড় কথা বললেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রকাশিত হয় না, কাজের মাধ্যমেই তার প্রতিফলন ঘটাতে হয়। আমাদের এই ছোট্ট দেশে অনেক দেশপ্রেমিক নীরব যোদ্ধা আছেন, যারা মুখে নয় কাজেই মুক্তির চেতনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। কবির ভাষায়ঃ

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে, কাজে বড় হবে

আমরা কথায় নয়, কাজেই বড় হতে চাই। এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। 

http://www.aimraj.com/download/alb/7235/সবগুলো গানের লিংক


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন